১ একটা খুন করা খুব জরুরী। মাথার মধ্যে খুনের স্বপক্ষে গোটা দশেক যুক্তি চলে আসে। বিপক্ষে একটিও না। তার মানে কাজটা করতেই হবে। নিজের স্বার্থ জড়িত থাকলে কাজ যত জঘন্যই হোক না কেন চেষ্টা করেও বিপক্ষে যুক্তি খুঁজে পাওয়া কঠিন। সিদ্ধান্ত যখন এমন তখন নাটকীয় ভাবে শ্যামা সম্মতি জানালো। খুন করার আর দরকার হয়নি। আমার হাতে সাত সাতটা প্রেমপত্র অথচ পাড়ার বখাটে ছেলে মনু দাবী করে শ্যামা তাকে ভালোবাসে। মনুকে দেখে শ্যামা লাজুক ভঙ্গীতে হাসে। এই দৃশ্য একাধিক বার আমার চোখে পড়ে। এর তার কাছে মনু গল্প করে শ্যামা তাকে গোপন একটা কিছু দেখার সুযোগ দিয়েছে। এমন প্রচার সত্যি কি মিথ্যে জানিনা তবে এই কথা আমার কানে আসার পর থকেই খুনের সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।
শ্যামা রাজী হলো। আমরা পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করবো। আমি নিশ্চিত হলাম শ্যামা শুধু আমাকেই ভালোবাসে। সত্যিকারের ভালোবাসার জন্যেই জাত ধর্ম বিসর্জন দিয়ে আমার হাত ধরে পালিয়ে যাবে। গত রাতে আমি মনুকে খুন করতে সারা রাত বসে ছুরি শান দিয়ছি। আজ ব্যাগ গুছাচ্ছি। খুব ভোরে এক কাপড়ে বেরিয়ে আসবে বাসা থেকে। ওর জন্য কিছু জামা কাপড় দুটি টুথ ব্রাশ শ্যাম্পু সাবান আর দরকারী কিছু জিনিস ব্যাগে ভরে নেই। সারা রাত ঘুম হয়নি। কাল থেকে আমার গায়ে এক জন মেয় মানুষের গন্ধ লেগে থাকবে। আহ... ভাবতেই বুকের বাম পাশে লাফিয় উঠছে। মাঝে মাঝে মনে হচ্ছে শরিরের সমস্ত জল বুঝি শুকিয়ে গেলো। চোখ বন্ধ করলেই অনুভব করি শিমুল তুলার মতো আমি বাতাসে উড়ে বেড়াচ্ছি।
করিমগঞ্জের লোকাল বাসে আমি শ্যামার হাত ধরে বসে আছি। জানুয়ারী মাস। প্রচন্ড শীত। বার বার আমার হাত ঘেমে যাচ্ছে। এতোটা দীর্ঘ সময় দুজনের গায়ে গা স্পর্শ করে পাশে বসার সুযোগ হয়নি এর আগে। ওর গায়ের গন্ধে আমি বেহুশ হয়ে যাবো বলে মনে হচ্ছে। বাতাসে উড়ে আসা চুল আমার মুখে ইচ্ছে মতো খেলা করছে। থেকে থকে একটা ভয় মাথা চাড়া দিয়ে উঠছিলো। আমি কি করবো একে নিয়ে। আমাদের কি সত্যিই বিয়ে হবে! আজ থেকে আমরা এক সাথে থাকবো! এমন অসম্ভব কি সম্ভব হতে চললো! এতো দিন জেনে এসেছি ভালোবাসা মনের ব্যপার। আজ কি হবে? দুই শরিরে ঘর্ষন ভালোবসার এ কেমন স্বাদ?
বাস থেকে নেমে রিক্সায় আট দশ মাইল যেতে হবে। বন্ধুর গ্রামের বাড়ি। আগে যাইনি। শুধু ঠিকানা লিখে নিয়েছি। চার রাস্তার মোড় পার হয়ে আমাদের রিকসা করিমগঞ্জের পাকা রাস্তা ধরে যাচ্ছে। বাসে বসে আমাদের মধ্যে কোন কথা হয় নি। সুযোগ ছিলোনা। বলার মতো কথা গুলো পাবলিক বাসে বসে অসম্ভব। আবার এমন মধুর মুহূর্তে কথা খুঁজে পাওয়া যায় না। রিক্সায় বসে ওর চোখের দিকে একবার তাকিয়ে চমকে উঠি। শ্যামা খুব স্বাভাবিক ভঙ্গীতে যাচ্ছে আমার সাথে। তার মধ্যে বিন্দু পরিমান ভয় আশংকার লেশ মাত্র নেই। ওকে এতটা সাহসী দেখে আমার ভয় লাগছে। রিক্সায় বসে বার বার আমার দিকে তাকাচ্ছে আর রহস্যজনক হাসি দিচ্ছে। ওর এমন হাসিতে আমি ঘাবড়ে যাচ্ছিলাম। আমি রিক্সার ডান পাশে সে বামে। স্ত্রীদের নাকি বাম পাশে বসতে হয়। এখনো স্ত্রী হয়নি তবে সময় বেশী বাকী নেই। তাছাড়া মেয়ে মানুষ রিক্সার ডান পাশে বসলে দুষ্ট লোকের চোখ লাগে। একজন না কিশোরী না যুবতী বয়সের সুন্দরী মেয়ে পাশে বসে রিক্সায়। রাস্তার দুই পাশে মানুষ জন তাকিয়ে থাকছে দেখে বিব্রত বোধ করছি। শ্যামা তেমন কিছু বোধ করছে বলে মনে হচ্ছে না। অচেনা জায়গা যে কেউ এক বার দেখেই বুঝে ফেলছে আমরা আগন্তুক। শ্যামা ডান দিকে তাকিয়ে সেই রহস্যজনক হাসি দিয়ে জানতে চাইলো-আমাদের কি আজই বিয়ে হবে? -হ্যা আজই হবে। আমি বললাম। -দুই তিন দিন পর হলে হয় না? -কেন সমস্যা কি? -আজ আমার শরির খারাপ। -কি হয়েছে তোমার? আমিতো ভালোই দেখছি! -আরে বুদ্ধু এই শরির খারাপের মানে অন্য কিছু। এই অসুখ শুধু মেয়েদেরই হয়... আমি হা করে তাকিয়ে আছি ওর মুখের দিকে। কিছু বুঝার চেষ্টা করছি কিন্তু বুঝতে পারছিনা। শ্যামা আমার বাম গালে একটা চিমটি কাটলো। এমন সময় বৃদ্ধ রিক্সা চালক পিছন ফিরে দুজনের দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে ফললো। আমিও হেসে ফেললাম, বোকারা না বুঝে যেভাবে হাসে। আমি আসলে যে জন্য হেসেছি, রিক্সা চালকের মুখে সামনের দিকে ছয়টি দাত নেই। পাকা সড়ক পার হয়ে আমাদের রিক্সা মাটির রাস্তায় যাচ্ছে। আর বেশী পথ বাকী নেই। গন্তব্যের যতই কাছে এগিয়ে যাচ্ছি আমার অস্থিরতা ততই বাড়ছে। এর পর কি হবে...
দুটি হোন্ডায় চার জন আমাদের রিক্সা ঘিরে ফেলে। প্রথম দেখে বুঝতে পারিনি পুলিশ। সিভিল পোশাক। তারা নিশ্চত তথ্য নিয়েই এসেছে। কোন কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে সাথে করে থানায় নিয় আসলো। দুই পরিবারে মধ্য রাত পর্যন্ত দেন দরবার চললো। সিদ্ধান্ত হলো দুই পরিবার অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তান যার যার ঘরে ফিরিয়ে নিবে। ক্ষতি যা হওয়ার হয়েছে। মামলা মোকদ্দমায় জড়িয়ে বাকী সম্মান টুকু হারাতে চায়নি কেউ। শ্যামাকে তার পরিবার ভারতে পাঠিয়ে দেয়। বাংলাদেশে তার আর ভালো বিয়ে সম্ভব না। মুসলমান ছেলের সাথে রাত কাটিয়ছে এই খবর রাষ্ট্র হয়ে গেছে। সারা রাত হাজতে দুজন পৃথক কক্ষে ছিলো এই কথা কেউ বিশ্বাস করছে না।
২ শ্যামা নমু দাসকে বাচাতে পারলো না। মনু সে রাতেই আত্মহত্যা করে। তার পড়ার ঘরে বিছানায় রক্ত মাখা লাশ পড়ে থাকে। নিজের পেটে ছুরি ঢুকিয় দেয়। দরজা ভেঙ্গে লাশ বের করা হয়। শ্যামা ভেবেছিলো আমার সাথে সে পালিয়ে গেলে আমি আর মনুকে খুন করবো না। রহস্যজনক ভাবে আমার ছুরিটি আমার ঘরে পাওয়া যায় নি। মনু যে ছুরি দিয়ে আত্মহত্যা করে কেউ না জানলেও আমি জানি সেটি আমার ছুরি। মনু স্কুলে সব সময় আমার চাইতে ভালো রেজাল্ট করতো। ছোট কালে সে একটা মেগনিফাইং গ্লাস হাতে নিয় ঘুরে বেড়াতো। সেটার লোভে আমিও তার পিছনে ঘুর ঘুর করতাম। সে বুঝতে পারে তার প্রিয় বস্তুটির প্রতি আমার খুব লোভ। এক দিন মনু আমাকে কাছে ডেকে তার প্রিয় মেগনিফাইং গ্লাস আমার হাতে দিয়ে বলে -নে এটা তোকে দিয়ে দিলাম। সেটা হয়তো তার আর প্রয়োজন ছিলো না। আমার প্রয়োজন ছিলো। আথচ হাতে আসার পর এই বস্তুটি আমার কোন কাজে লাগেনি। এখনো আমি কোন কিছু গভির ভাবে দেখতে পাই না। এখনো আমি শুধু তাকিয়ে থাকি দেখতে শিখিনি। এখনো আমার চোখ শুধু আকাশের নীল দেখে গভীরতা খুজে পায় না।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোঃ আক্তারুজ্জামান
সব মানুষের জীবনে একটা মন কেমন করা বয়স থাকে সেই বয়সের প্রেমকাহিনী তাই এর স্বাদটাই অন্যরকম লাগল। ধন্যবাদ।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।